শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭

কাবাশরীফ নিয়ে হিন্দুদের মিথ্যাচারের জবাবঃ

অনলাইন এবং রিয়াল লাইফেরও কিছু হিন্দুরা একটা কথা প্রায়ই মুসলিমদের মুখের উপর বলে, যে কাবা শরীফ নাকি ছিল শিব মন্দির। কিছু কিছু মুর্খ হিন্দু আবার এক ধাপ এগিয়ে বলে ওটা নাকি এখনো শিব মন্দিরই আছে, মুসলিমরা লুকিয়ে লুকিয়ে নাকি সেখানে শীবের পুজা করে। প্রকৃত পক্ষে এদের সমালোচনা করার ভাষা আমার জানা নেই। এরা নিজেরা নির্লজ্জতার মাথা খেয়ে শীব লিংগ পুজা করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আবার সেই লজ্জা ঢাকতে মুসলিমদের কাবাকে শীব লিংগ এর সাথে তুলনা করে। অনলাইন থেকে এলোপাথারি কিছু ছবি এনে কপিপেষ্ট করে এরা মিথ্যাচার করে। এদের মিথ্যাচারময় দাবীগুলো এখন তুলে ধরা হবে। এদের মিথ্যাচারের প্রধান বিষয় হচ্ছে হাজরে আসওয়াদ বা কালা পাথরটি। এরা বলতে চায় এটাই নাকি শীবলিংগ। মূলত যার চোখ আছে এবং হালকা বুদ্ধি আছে এমন কোন মানুষ জীবনেও এ কথা বলবে না। নীচে হাজরে আসওয়াদ এবং একটি শীবলিংগের ছবি দেয়া হল, দেখুন তো দূর দূর হতেও কোন মিল আছে কিনা ?

 
এরপর দ্বিতীয় নিকৃষ্ট মিথ্যাচার যেটা করে সেটা হচ্ছে হাজরে আসওয়াদকে যোনীর সাথে তলনা (নাউজুবিল্লাহ)। তারা বলে এটা নাকি দেখতে স্ত্রী যোনীর মত। আসলে হিন্দুরা যে শুধু শীবলিংগের পুজা করে এমনটা নয়, বরং সেই সাথে তারা যোনীর পুজাও করে। শীবলিংগটি যেটার উপরে বসানো থাকে এটি একটি স্ত্রী যোনী। পৌরানিক ভাষ্যমতে এটি হচ্ছে পার্বতীর যোণী, যাক গে সেসব বিষয়ে না যাই। তবে হিন্দুরা সাদৃশ্য দেখিয়ে বলতে চায় যে হাজরে আসওয়াদ হচ্ছে যোণি এবং মুসলিমরা যোনীর পুজা করে। প্রকৃতপক্ষে হাজরে আসওয়াদ পাথরটি কোনভাবেই স্ত্রী যোনীর সাথে মেলে না। গুগলে হাজরে আসওয়াদ লিখে সার্চ দিলে যে ছবিটি আসে সেটি হচ্ছে পাথরটির একটি দিক মাত্র। উপরে যে ছবিটি দিয়েছি সেটাই দেখুন, মূলত পাথরটির চারপাশে স্টিলের পাত বসানো, যাতে এটা ক্ষয়ে না যায়। মূল পাথরটি ভিতরে। হাজরে আসওয়াদ এর মূল টুকরো পাথরটির আকার এবার দেখুন নীচের ছবিতে, ছবিটি উইকিপিডিয়া হতে নেয়া, নিজেরাই যাচাই করুন এটা কোনভাবে স্ত্রীযোনীর সাথে মিলে কিনা,

উইকিপিডিয়া লিংক https://en.wikipedia.org/wiki/Black_Stone

একিসাথে উইকিপিডিয়াটি ভালো করে পড়ুন তো, কোথাও কোন প্রমান পান কিনা যে হাজরে আসওয়াদ শিবলিংগ বা কাবা শরীফ কোনকালে শীব মন্দির ছিল? আর হিন্দুদের ওপেন চ্যালেঞ্জ, কেউ এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমান দিতে পারবে যে কাবা শীব মন্দির ছিল ? ওপেন চ্যালেঞ্জ। কাবায় তো দূরে থাক, সারা সৌদি আরবে কোথাও জীবনে শীব মন্দির পাওয়া গেছে কিনা পারলে কেউ প্রমান দেখাক।


এরপর মুসলিমরা কাবার পুজা করে এই মর্মে হিন্দুরা বেশ কিছু যুক্তি দেয়, সেগুলোর যৌক্তিকতা বিচার করা হল। হিন্দুদের যুক্তিঃ মুসলিমরা কাবার দিকে ফিরে নামাজ পড়ে, আবার হজের সময় তার চারদিকে তাওয়াফ করে, এগুলো কি মুর্তি পূজা নয়? যৌক্তিকতা খন্ডনঃ কাবা আমাদের কেবলা। আর কেবলা অর্থই হচ্ছে দিক নির্দেশ। অর্থাৎ কেবলা আমাদের দিক নির্দেশ মাত্র। এর দিকে ফিরে বিশ্বের সব মুসলমানকে নামাজ পড়ার আদেশ দেয়া হয়েছে, যাতে সবার মধ্যে একতা থাকে। যদি দিক নির্দেশ না থাকে, তবে দেখা যাবে একজন নামাজ পড়বে দক্ষনে একজন উত্তরে, এভাবে গন্ডগোল লেগে যাবে। এজন্যই ইউনিটির জন্য কাবাকে কিবলা বা দিক নির্দেশ ধরা হয়েছে। আর কাবার দিকে ফিরে নামাজ কখনোই মুর্তি পুজার সাথে তুলনীয় হতে পারে না। কারন সুদুর সৌদি আরবে অবস্থিত কাবার পুজা মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে বসে করছে, এটা চিন্তা করতে গেলেও হাস্যকর মনে হয়। ধরুন কখনোকি এমন দেখেছেন কোণ হিন্দুকে, মুর্তি রয়েছে গৌহাটি, আর সে কেরালায় বসে প্রনাম দিচ্ছে ? দেখেন নি, তাই না ? তাহলে নামাজকে কিভাবে কাবার পুজা বলা যায় ? এরপর তাওয়াফের ব্যাপারে বলছি, মুসলিমরা তাওয়াফ করে আল্লাহর একত্ববাদ প্রদর্শনের জন্য। তারা কখনোই তাওয়াফ দ্বারা কাবার পুজা করে না। মুসলিমরা এমনকি কাবার মধ্যে ঢুকেও নামাজ আদায় করে। আবার প্রাক ইসলামী যুগে কাবার উপর দাড়িয়েও আজান দেয়া হত। তাহলে চিন্তা করুন যার পুজা করছে তাকে কি কেউ নিজের পায়ের নিচে রাখে ? যদি মুসলিমরা কাবার পুজা করত তবে কাবার উপর পা দিয়ে উঠে দাড়াতো ? হিন্দুরা কি পারবে তাদের মুর্তির মাথায় পা দিয়ে দাড়াতে? তাই হিন্দুদের এসব কোন যুক্তিই ধোপে টিকে না। হিন্দুদের যুক্তিঃ মুসলিমরা হাজরে আসওয়াদকে চুমু দেয়, আর এটিও মুর্তি পুজার সদৃশ। যৌক্তিকতা খন্ডনঃ ইসলাম মতে কাবার পাথরটি দিক নির্দেশনের জন্য আল্লাহ আদম আঃ কে প্রেরন করেছিলেন স্বর্গ হতে। অর্থাৎ পাথরটি ইহজাগতিক কোন পাথর নয়। আর মিরাকলের বিষয় হচ্ছে, বিজ্ঞানীরাও গবেষনা করে দেখেছেন যে কাবার এই পাথরটি আসলে পৃথিবির কোন পাথর নয়, বরং এটি উল্কার মাধ্যমে পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা।আর্কিওলজিষ্ট Paul Partsch গবেষনা করে এমনোটাই ব্যাখা দিয়েছেন। বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়া হতে এর Scientific origins অংশটি পড়ুন, https://en.wikipedia.org/wiki/Black_Stone । তাই মুলত মুসলিমদের এই কালো পাথরটির চুমু দেয়াটা আর কিছুই নয়, বরং স্বর্গীয় একটি পদার্থকে স্পর্শ করার মাত্র। মুসলিমরা কখনোই এটিকে পুজা করে না। আর চুমু দেয়া মানেই কি পুজা? চুমু দেয়া কখনোই প্রতিমা পুজা হতে পারে? কখনো কি দেখেছেন কোন হিন্দুদের মন্দিরে গিয়ে দেবীদের চুমাচুমি শুরু করতে ? তাহলে এধরনের বক্তব্য তারা কিভাবে দেয়? মানুষ তো ভালোবেসে শিশুকেও চুমু দেয়, তারমানে কি শিশুটির পুজা করে? হিন্দুদের যুক্তিঃ হজ্জের সময় মুসলিমরা সবাই সাদা কাপড় পড়ে এটাও প্যাগান সংস্কৃতির সাথে মিলে। যৌক্তিকতা খন্ডনঃ আমি আসলে জানি না, সাদা কাপড় পড়া কোথাকার প্যাগান সংস্কৃতি তবে বলি, হজ্জ্বের সময় সাদা কাপড় পড়া হয় যাতে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ না থাকে সেখানে। মানুষ অপর একজন মানুষকে আলাদা করে ফেলে তার পোশাক আসাক দেখে। পোশাক দেখেই আমরা বলতে পারি কে গরীব কে ধনি, কে আফ্রিকান কে ইউরোপিয়ান। কিন্ত মানুষে মানুষে এই ভেদাভেদ যাতে না থাকে এজন্যই হজ্জের সময় সবাই সাদা কাপড় পড়ে। কোন প্যাগান সংস্কৃতিতে মানব সমতার এরকম দর্শন আছে কিনা আমার জানা নেই। হিন্দুদের যুক্তিঃ মক্কায় মুসলিমরা শয়তানকে পাথর মারে প্রতীক কল্পনা করে। আর এটাও মুর্তি পুজা সদৃশ। যৌক্তিকতা খন্ডনঃ ইসলামে একমাত্র আল্লাহ তালার সাথে কোন প্রকার শরীক করতে নিষেধ করা আছে এবং তার মুর্তি, প্রতীক বা কোন কিছুর সহিত তুলনা করতে নিষেধ করা আছে। কিন্তু এই নিয়ম শয়তানের জন্য নয়। ইসলাম প্রতীকি কর্মে অবিশ্বাসী নয় বরং শুধু সৃষ্টার প্রতীক তৈরিতে অবিশ্বাসী। আর একিসাথে পুজা আর পাথর মারা এক কিভাবে হল ? এটি তো সম্পুর্ন বিপরীত দুটি বিষয় ? তাই মক্কায় শয়তানকে পাথর মারা কোনভাবেই মুর্তি পুজার সাথে মেলে না। পরিশেষে বলব যারা শুধু এই জাতীয় যুক্তি প্রদান করে তারা আসলে কখনো সত্য জানার চেষ্টা করেনা বোঝার চেষ্টাও করে না। তারা নিজেরাই নিজেদের গোমরাহী করে। সত্য তাদের ধরাছোয়ার অনেক বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে এবং নিজেরা অজ্ঞতার অন্ধাকারে নিমজ্জিত হয়।

২টি মন্তব্য: