শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭

বৈদিক দন্ড, নাকি অনলাইন ভন্ড ?

আমার লিখিত একটি নোট যেখানে আমি বেদ নামক গ্রন্থের, যারা বৈদিক ধর্মের বাইরে তাদের প্রতি কিছু অমানবিক মন্ত্র তুলে ধরেছিলাম অতি স্পষ্ট রেফারেন্স ও প্রমানাদির মাধ্যমে।
 নোটটি পড়ুন এখান থেকে
কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে অনলাইনে একদল আর্য নামক ভন্ড আছে। এরা আবার উক্ত নোটের জবাব লেখার চেষ্টা করেছে। এটা তারা করেছে মুলত অনলাইন হিঁদুদের সামান্য আইওয়াশ ও সত্য গোপন করার প্রচেষ্টায়। এই নোটে তাদের ভন্ডামী ও মিথ্যাচারগুলি পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হবে।
তারা লিখেছে,
সমগ্র সৃষ্টি জগতের কল্যাণের জন্য ঈশ্বর বেদ বাণী প্রেরণ করেছেন। যাহাতে মানব জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়বস্তুর সুষ্পষ্ট আলোচনা রয়েছে। আমার উত্তর, বেদ নাকি মানব জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতে করনীয় বিষয়বস্তুর সুস্পষ্ট আলোচনা করেছে ? অস্পষ্টও না, একেবারে সুস্পষ্ট ?
যাই হোক, দাদারা কোণ ধরনের নেশাজাতীয় কিছু খেয়ে লিখেছিল কিনা আমার জানা নেই, তবে আমি যদি প্রশ্ন করি, কারো ক্যান্সার হলে কি করতে হবে, বেদ কি তা লিখেছে ? ক্যান্সার বাদ দিক, ডায়রিয়া হলে কি খেতে হবে বেদ কি তা বলেছে? ভুমিকম্প বা যেকোণ বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কি করতে হবে ? অর্থনৈতিক বিপর্যয় এলে কি করতে হবে ইত্যাদি বেসিক বিষয়গুলো কি বেদ বলেছে ? দেখাতে পারবে দাদা ?
যাক গে, এবার ধারাবাহিকভাবে আমার দেয়া যে মন্ত্রগুলোকে তারা খন্ডোন করার চেষ্টা করেছে, সেগুলো যৌক্তিকতা ও গ্রহনযোগ্যতা দেখা যাক।

প্রথম মন্ত্র নিয়ে তাদের লেখা জবাব,
“হে ঈশ্বর ও জ্ঞানী মানুষ, যারা দোষারোপ করে বেদ ও ঈশ্বরের তাদের উপর তোমার রাগ
বর্ষন কর।” (ঋগবেদ ২।২৩।৫)
তাহলেবেদ অনুসারে হাজারো অহিন্দুরাও পাপী, কারন তারা বেদ ও বৈদিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয়।
যৌক্তিকতা বিচারঃ
এ মন্ত্রে কোথাও বলা হয় নি যে, বেদ ও ঈশ্বরের অবিশ্বাসীদের উপর রাগ বর্ষন করার কথা। অতএব হাজারো অহিন্দুরা পাপী কি না সে প্রশ্ন উঠছেই না। এ মন্ত্রে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তিনি যেন আমাদের সমস্ত হিংসাকে নিবৃত্ত করেন। কোন অপরাধ বা শত্রুজন আমাদের উপর হিংসিত না হয়। অর্থাৎ সর্বতোভাবে ঈশ্বরের কাছে রক্ষার জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে

আমার জবাবঃ

এখানে রেফারেন্স দিতে আমি ছোট্ট একটা ভুল করেছি আর জনৈক দাদা, আমার ছোট্ট ভুলের কারনে মুল মন্ত্রটা এড়িয়ে গেছেন। রেফারেন্সটা ২/২৩/৫ হবে না, হবে ২/২৩/৪। অর্থাৎ আমার দেয়া মন্ত্রটির নাম্বার ছিল ৫ নয়, ৪। এরকম ছোটখাট ভুল হতেই পারে। যদিও নোটে মন্ত্র নাম্বার ৫ এর জায়গায় ৪ লিখেছি, কিন্তু স্ক্রীণশটে স্পষ্টভাবেই লাল দাগ দেয়া ৪ নাম্বার মন্ত্রটি দেখা যাচ্ছে। তাহলে দাদা কি সেটা দেখলেন না ? নাকি আমার ছোট্ট ভুলের সুবাধে উনি মন্ত্রটা এড়িয়ে গিয়ে বাচলেন ? যাক গে, মন্ত্রটার স্ক্রীনশট পুনরায় দেয়া হল, ঋগবেদ ২/২৩/৪,(যেটা প্রথমে ভুলে ২/২৩/৫ লিখেছিলাম)




এরপরের মন্ত্র নিয়ে তারা লেখে,
যে লোক ঈশ্বরের আরাধনা করে না এবং যার মনে ঈশ্বরের প্রতি অনুরাগ নেই, তাকে পা দিয়ে পাড়িয়ে হত্যা করতে হবে।”(ঋগবেদ ১।৮৪।৮)
অর্থাৎ বেদের স্পষ্ট আদেশ, যে ব্যাক্তি নাস্তিক বা বৈদিক ঈশ্বরের উপাসনা করে না সে পাপী। এবং সে পা দিয়ে পাড়িয়ে মারার যোগ্য
যৌক্তিকতা বিচারঃ
মন্ত্রে বৈদিক ঈশ্বরে উপাসনাহীন কোন ব্যক্তিকে শাস্তির কথা বলা হচ্ছে না। মন্ত্রটিতে একজন প্রজার মনে শঙ্কা বা উদ্বেগ এর উল্লেখিত হয়েছে। এই হেতু "অরাধসম" শব্দটি এসেছে, "রাধ ইতি ধননাম ; নিরুক্ত ৪।৪। অর্থাৎ ধন বা ঐশ্বর্যহীন বা দানহীন কৃপন ব্যক্তি। এরূপ প্রজার মনের উদ্বেগ এই যে, না জানি কখন ঐশ্বরর্যবান রাজা ধনহীন, কৃপন, নির্বল ব্যক্তিকে অহিছত্রের ন্যায় নষ্ট করে। ক্ষুম্পম অহিচ্ছত্র ভবতি ইতি যাস্ক। অহিচ্ছত্র হচ্ছে বর্ষাকালে পরিত্যক্ত কাঠের উপর জন্মানো গোল ছাতা সদৃশ দেখতে। যা সাপের ছাতা এবং পান্জাবী ভাষায় খুম্বী বলে। এই ছত্র গুলো সামান্য পায়ের ধাক্কায় নষ্ট হয়ে যায়। একটি ঐশ্বর্যবান রাজার রাজ্যে সর্বদাই উচিৎ যেন উত্তম বলশালী বিদ্বান উৎপন্ন হয়। এ জন্য যজুর্বেদ২২।২২ মন্ত্রে পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে যে, আমাদের রাজ্যে যেন বিদ্বান ব্রাহ্মন, নির্ভয় ক্ষত্রিয়, সুন্দর ব্যবহার কারী স্ত্রী এবং শত্রু বিজয়কারী পুরুষ উৎপন্ন হয়। কিন্তু একজন নির্বল, ভয়েভীত,দানহীন, ধনহীন ব্যক্তব রাজ্যে প্রায়ই অস্মানিত হওয়ার ভয়ে ভীত থাকে। তাই প্রজার মনে এরূপ উদ্বেগ ব্যক্ত হয়েছে। নিরুক্ত ৫।১৭ তে ঠিক এই মন্ত্রটিই রয়েছে -

আমার জবাবঃ
এই মন্ত্রটি লেখার সময় একটি শব্দে আমি ছোট্ট একটি ভুল করেছি, মূলত ভুলটা আমার না, তাদের বেদ এর প্রিন্ট এর দোষ। সেখানে Goldless কে আমি Godless পড়েছি, কারন Goldless শব্দটি এমনভাবে লেখা হয় না, এটি লেখা হয় Gold less । যাক গে, এবার আসুন দেখি তাদের দেয়া এই মন্ত্রটির যৌক্তিকতা, মন্ত্রটিতে প্রথমে বলা হয়েছে ধনহীন ব্যাক্তির কথা, দ্বিতীয়তে বলা হয়েছে কৃপনের কথা। প্রথম কথা হচ্ছে ধনহীন ব্যাক্তির কি দোষ ? সে কি ইচ্ছে করে গরীব হয়েছে ? গরীব হওয়া কি তার অপরাধ ? দ্বিতীয়ত, দাদার মতে মন্ত্রটিতে কৃপন ব্যাক্তির কথা বলা হয়েছে,কিন্তু এই কৃপন কোণ অর্থে ? গরীবকে দানের অর্থে ? না, কৃপন এই অর্থে যে সে ঈশ্বরের নামে বৈদিক দের অর্থ দিচ্ছে না। সে বেদ এর ঈশ্বরের পুজার জন্য ধনসম্পদ দিচ্ছে না, এজন্য তাকে পা দিয়ে পাড়িয়ে মারার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আর হ্যা এটি প্রজার উৎকণ্ঠা নয়, বরং প্রার্থনা, পুর্বের আর্য সমাজ কর্তক অনুবাদিত বেদ মন্ত্রটির স্ক্রীনশটটি আবার দেখুন, devoid of wealth of devotion অর্থাৎ ভক্তি বা উপাসনার জন্য যার নিকট ধন নেই এমন ব্যাক্তি, সর্বশেষ লাইন When will you listen to our prayer and praises ? অর্থঃ তুমি কখন আমাদের প্রশংসা ও প্রার্থনা শূনবে ? অর্থাৎ স্পষ্ট যে এখানে প্রজার উৎকণ্ঠা নয় বরং প্রার্থনা প্রকাশ পেয়েছে যাতে করে বৈদিক দের অর্থ প্রদান না কারীকে পা দিয়ে পাড়িয়ে মারা হয়।
মূলত বেদ হচ্ছে কতিপয় প্রার্থনার সমষ্টি, যা ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। বেদ এ এমন কোণ মন্ত্র পাওয়া যায় না যেখানে ঈশ্বর নিজে মানুষকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছে, বরং মানুষই ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছে এমনটাই পাওয়া যায়(যা থিওরিটিকালি প্রমান করে বেদ ঈশ্বরের বানী নয়, বরং ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে বলা সমসাময়িক মানুষের বানীসমষ্টি)। অর্থাত এটা শুধু প্রজার প্রার্থনা বা উৎকণ্ঠা, এমনটা বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোণ উপায় নেই।একিসাথে দাদার মতে নিরুক্ত ৫.১৭ এও নাকি এমনটাই বলা হয়েছে। এটী চূড়ান্ত মিথ্যাচার। নিরুক্ত ৫.১৭ এ সরকাসরি নাস্তিক এবং উপাসনা না করা ব্যাক্তিকে পাড়িয়ে মারার প্রার্থনা করা হচ্ছে। নীচে স্ক্রীনশট, নিজেরাই যাচাই করুন।




আমার দেয়া পরবর্তী মন্ত্র নিয়ে তারা লেখে,
গবাদিপশুগুলো কি করছে নাস্তিকদের এলাকায়, যাদের বৈদিক রীতিতে বিশ্বাস নেই। যারা সোমার সাথে দুধ মিলিয়ে উতসর্গ করে না এবং গরুর ঘি প্রদান করে যজ্ঞও করে না। ছিনিয়ে আনো তাদের ধনসম্পদ আমাদের কাছে। " (ঋগবেদ ৩।৫৩।১৪)
শুধু বৈদিক রীতিতে বিশ্বাস না করায়, যজ্ঞ না করায় লুটের আদেশ।এটি কি আসলে কোন ঈশ্বরের বানী হতে পারে?
যৌক্তিকতা বিচারঃ
মন্ত্রটিতে "কীকটেষু" শব্দ এসেছে যার অর্থ কীকট বাসী। নিরুক্ত ৬।৩২ এ বলা হয়েছে " কীকটা নাম দেশোনার্য নিবাস" অর্থাৎ এ দেশে অনার্যরা বাস করতো। কীকট কাদের বলা হয়? যে লোক কুৎসিত কর্ম করে জিতে অথবা উত্তম কর্ম কে তুচ্ছে মনে করে ঐ লোক বা দেশ কে "কীকট" বলে। অর্থাৎ তারা প্রকৃত পক্ষে কোন রূপ ধর্ম পালন করে না। তারা গাভীর থেকে না কোন উপযোগ নেয়। না ঘৃতকে যজ্ঞে আহুতি দেয়। সর্বদা " প্রমগন্দস্য " তদপত্যং প্রমগন্দোত্যন্তুকুসীদিকুলীন ; নিরুক্ত ৬।৩২ " অর্থাৎ ধন কে আমোদ প্রমোদের মধ্যে দিয়ে ব্যায় করে অথবা সুদে অর্থ সংগ্রহ করে। অর্থাৎ তারা সর্বদাই অধর্মে সম্পদের অপব্যবহার করে। যা কিনা একটি রাষ্ট্রের জন্য সর্বদাই হানিকর। তাই একজন রাজার কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে উক্ত ধন আমাদের প্রাপ্ত করাও। কারন একটি আর্যাবর্ত্ত রাষ্ট্রেই সম্পদের যথার্থ ব্যবহার হয়ে থাকে। এবং সেই সাথে প্রার্থনা করা হচ্ছে আমাদের মধ্যে নীচ কুপ্রবৃত্তিবান দের সর্বদা দমন করো। মন্ত্রে লুটপাটের কোন আদেশ দেওয়া নেই। কারন এটা কুপবৃত্তিদের লক্ষন। একজন আর্যাবর্তের রাজা অধার্মিক রাষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেই তবেই সে রাষ্ট্রকে জয় করতো। কোন লুটপাট বা ছিনতাইয়ের মাধ্যমে নয়।


পাল্টা যৌক্তিকতা বিচারঃ
দাদার মতে, যে লোক কুৎসিত কর্ম করে জিতে অথবা উত্তম কর্ম কে তুচ্ছে মনে করে ঐ লোক ব দেশকে “কীকট” বলে। আমার প্রশ্ন দাদা কি তার এই বক্তব্যের পক্ষে কোণ প্রমান পেশ করতে পারবে? ঐতিহাসিকমতে কিকট এক রাজ্যের নাম ছিল যেটা বর্তমান ইন্ডিয়ার বিহারে অবস্থিত।wikipedia.org/Kikata_Kingdom
এটি ছিল মাগদাস রাজার পুর্বপুরুষদের আবাস। এবং কোণ প্রমান নেই যে তার কুতসিত কর্ম করত। বরং তারা ছিল বৈদিক ধর্ম হতে বিচ্ছিন্ন, অর্থাৎ তারা বৈদিক রিতিতে বিশ্বাসী ছিল না। আর এটাই ছিল তাদের অপরাধ, মহাঋষি যস্কের নিরুক্ত হতে যা স্পষ্ট প্রমান দেয়া হয়েছে। মূলত বেদ যখন আর্যদের হাত ধরে প্রচার শুরু হয় ভারতে, তখন বৈদিক ধর্ম হয়ত সব অঞ্চলে প্রচলন তখনো পায়নি, আবার অনেক জাতি এই ধর্ম স্বীকার করেনি। এরফলে তাদের উপর চলত এভাবেই বৈদিক ধর্মালম্বীদের অত্যাচার। দাদার মতে এখানে অনার্যরা থাকত। এখন অনার্য কাদের বলে, আসুন দেখি। স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতি তার সত্যার্থ প্রকাশের ২৬৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,
"দ্বিজ, তথা ব্রাক্ষন, ক্ষত্রীয় ও বৈশ্যরাই কেবল আর্য, বাকি সব অর্থাৎ শুদ্ররাও অনার্য। এবং আর্যবার্তার বাইরের অঞ্চলে যারাই থাকে, তারাই দস্যু, ম্লেচ্ছ ইত্যাদি।" 

এই অর্থে বৈদিক মতে প্রতিটি মুসলিম ও খ্রিষ্টান বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী এবং খোদ হিন্দু ধর্মাবলম্বী শুদ্ররাও অনার্য এবং ভারত ব্যাতীত অন্যত্র সবাই বর্বর ম্লেচ্ছ। তাই এটা অস্বাভাবিক নয় যে বেদ প্রচারকালীন কীকটবাসী যারা বৈদিক ধর্ম গ্রহন করেনি তাদেরকে বেদ এ শত্রু ঘোষনা করে লুটের প্রার্থনা করা হবে।
দাদার দাবী, তারা ধন কে শুধু আমোদ প্রমোদে ব্যায় করত, সুদে অর্থ সংগ্রহ করত, তারা অধর্মে সম্পদ ব্যায় করত। দাদা কি এই দাবীগুলোর পক্ষে কোণ প্রমান দেখাতে পারবে ? নিরুক্ত হতে স্পষ্ট প্রমান দেখানো হয়েছে, তাদের অপরাধ ছিল, তারা তাদের সম্পদ বৈদিক যজ্ঞে ব্যাবহার করত না এবং বৈদিক যজ্ঞ পালন করত না। শুধু এটাই ছিল তাদের অপরাধ।অন্য কোণ অপরাধের কথা নিরুক্তে লেখা নেই। আর এজন্য তাদের সম্পদ কুক্ষিগত করার প্রার্থনা বেদ এ। এছাড়াও কেউ যদি নিজের আমোদ প্রমোদে ধন সম্পদ ব্যায় করে তো তার সম্পদ ছিনিয়ে আনা কতটা যুক্তিযুক্ত ? সেক্ষেত্রে তো চোরও এটা দাবী করতে পারে যে মালিক সম্পদের সঠিক ব্যাবহার করত না তাই সে সম্পদ নিয়ে এসেছে। দাদার আরো মিথ্যা দাবী, “মন্ত্রে লুটপাটের কোন আদেশ দেওয়া নেই। কারন এটা কুপবৃত্তিদের লক্ষন" । আমার প্রশ্ন ঠিক কোণ কাজটা করলে তবে তাকে লুটপাট বলা হয় ? একদল মানুষ যারা বৈদিক রিতিতে বিশ্বাসী নয়, তাদের সম্পদ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুক্ষিগত করার প্রার্থনা, এটা কি লুটপাট নয় ? নীচে নিরুক্ত হতে স্পষ্ট প্রমান দেখানো হল যে তাদের কি অপরাধ ছিল এবং তাদের সম্পদ ছিনিয়ে আনার প্রার্থনা করা হল।


বিধর্মী বা নাস্তিকদের প্রতি, যারা বৈদিক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না ও তার নামে অর্থ সম্পদ প্রদান করে না তাদের লুটপাট ও ধংস করে দেয়ার প্রার্থনা বেদ এ আরো অনেক আছে, যেমন,
ঋগবেদ ৮/৬৪/১-২,
বলা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি,
ধন প্রদান করতে ও নাস্তিক বা স্তুতিবিদ্বেষীগনকে বিনাশ করে দিতে, এবং তাদের পদ দাড়া বিনাশ করতে যারা ধন প্রদান করছে না যজ্ঞের জন্য।
নীচে সায়ন ভাষ্যের বাংলা অনুবাদ, শ্রী রমেশচন্দ্র দত্তের।
{উল্লেখ্য, Swami Dayanand swarswati ঋগবেদ ৬ মন্ডল পর্যন্ত অনুবাদ করেছেন, বাকিগুলো করেন নি। তাই এই অংশে তার অনুবাদ পাওয়া যায় না}


আর্য সমাজের আরেকজন প্রসিদ্ধ স্কলার স্বামী সত্যপ্রকাশ স্বরস্বতি এর অনুবাদ করেছেন,

”May our hymns please you; O lord of resolute will power, please display your bounty. May you drive off the infidels. May you crush with your foot the niggard churls who offer no homage. You are powerful; there is none so powerful as you are.”

[Rigved. Tr. SatyaPrakash Saraswati, Vol 10, page 3289]

পরের মন্ত্র নিয়ে তারা লেখে,

“যে ব্যাক্তি ব্রাক্ষণের ক্ষতি করে ব্রাক্ষণের
গরু নিজের কাজে লাগায়, তাকে ধংস করে দাও।” (অথর্ববেদ ১২।৫।৫২)
বেদের এই মন্ত্র যে স্বার্থবাদি ব্রাক্ষণ কর্তক লিখিত, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। যারা শুধু নিজেদের ক্ষতিকারীর প্রতি এরকম খরগহস্ত হবার আদেশ দিচ্ছে।
 যৌক্তিকতা বিচারঃ
মন্ত্রটিতে "ব্রহ্মজ্যম" শব্দ এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে ব্রহ্মজ্ঞানী ব্রহ্মচারী বা বেদজ্ঞ এর হানিকারক বা ধ্বংসক। এবং "আদদানম" অর্থাৎ যারা ছিনিয়ে নেয় এক কথাই ছিনাতাইকারী। মন্ত্রে "গাভী" ছিনিয়ে নেওয়ার উল্লেখ নেই। অনেক ভাষ্যকার এরূপ করেছে, যারা "বেদ বাণীকে" ছিনিয়ে নেয়। অর্থাৎ জ্ঞানের অপহরন করতে চায় অথবা ধার্মিককে বেদ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। এরূপ ব্যক্তির উপর "উপ সাদয়" চড়াও হও বা নাশ করো। একজন ব্রহ্মজ্ঞানী বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ এর মর্যাদা সমাজে সর্বাধিক। বৈদিক বর্ণ ব্যবস্থা জন্মগত জাতিপ্রথাকে স্বীকার করে না। মূলত ব্রহ্মজ্ঞানীকেই ব্রাহ্মণের সংজ্ঞা দেওয়া হয় (ব্রহ্ম জানাতি স ব্রাহ্মণ)। আর বেদে এরূপ ব্রহ্মজ্ঞানী ব্রহ্মণকে সমাজের মুখ বলা হয়েছে (ব্রহ্মণ মুখমআসিদ) । কারন এক জন বেদ জ্ঞানী তথা ব্রহ্মজ্ঞানী বিদ্বানই সমাজ কে পরিচালনা করে থাকে। আর সমাজের সবার কর্তব্য হচ্ছে তাদের সর্বদা রক্ষন করা। মনুস্মৃতিতে এজন্য বলা হয়েছে, "শশ্রূষা ব্রাহ্মণাঞ্চ রাজ্ঞাং শ্রেয়স্করং পরম, (মনুঃ ৭।৮) অর্থাৎ ব্রাহ্মণের সেবা করা রাজাদিগের পরম মঙ্গলদায়ক। অতএব যেসব ব্যক্তি সর্বদা ব্রহ্মজ্ঞানী (ব্রাহ্মণ) কে নষ্ট করতে চায় বেদ সেজন্য আজ্ঞা দিচ্ছে তাদের উপর চড়াও হও তাদের নাশ করো।


আমার জবাবঃ

মূল নোটে মন্ত্রটির রেফারেন্স প্রদানে কিঞ্চিত ভুল করেছি, কিন্তু অবাক বিষয় স্ক্রিণশটে রেফারেন্সটি কিন্তু স্পষ্ট প্রদান করা আছে, জনৈক দাদা কি সেটা দেখেও দেখলেন না, নাকি ছুতোয় এড়িয়ে গেলেন ?
মন্ত্রটির রেফারেন্স ১২/৫/৬২, যেটা ভুলে প্রথমে ৫২ লিখেছিলাম। নীচে মন্ত্রটির আর্য সমাজ কর্তক অনুবাদের স্ক্রীনশট, অনুবাদক আচার্য বিদ্যানাথ শাস্ত্রী, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ব্রাক্ষনের গরুকে নিজ কাজে ব্যবহারকারী ও ব্রাক্ষনের ক্ষতিকারীর প্রতি ধংসের আদেশ দেয়া হল।




পরবর্তী মন্ত্র নিয়ে তারা লেখে,
“তু বেদ নিন্দুককো কাট ডাল, চির ডাল, ফাড়
ডাল, জ্বালা দে, ফুক দে, ভষ্ম কর দে,”
অর্থাৎ বেদের নিন্দাকারীকে, কেটে ফেল,
চিড়ে ফেল,ফেড়ে ফেল,জ্বালিয়ে দাও,ফুকে
দাও,ভষ্ম করে দাও" (অথর্ববেদ ১২।৫।৬২)
এগুলো যে চরম মানবতার লঙ্ঘন এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
যৌক্তিকতা বিচারঃ
এ মন্ত্রটির আশয় পরবর্তী মন্ত্রে স্পষ্ট হয়েছে যে, বেদ মূলত কাদের এমন কঠোরতম দন্ডের বিধান দিচ্ছে। পরের মন্ত্রটিতে বলা হয়েছে যে, "ব্রহ্মজ্যং অনুসংদহ " অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞানী বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের হানিকারক কে জ্বালিয়ে দাও। ব্রহ্মজ্ঞানীর (ব্রাহ্মণের) একটি সমাজ তথা রাষ্টে প্রয়োজনিতা কতটুকু এ সমন্ধে অথর্ববেদ ৫।১৯।৬ এ বলা হয়েছে যে, " যে উগ্র রাজা অভিমানী হয়ে বেদবিদ বিদ্বান ব্রাহ্মণ কে নষ্ট করতে চায় তার রাষ্ট্র সম্পদ শূণ্য হয়ে যায়। যেখানে ব্রহ্মজ্ঞানী ব্রাহ্মণ কষ্ট প্রাপ্ত হয় সেই রাষ্ট্র পরাজিত হয়।"
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, একটি রাষ্ট্রে ব্রহ্মজ্ঞানীর গুরত্ব কতটুকু। কিন্তু যেসব অধার্মিক এই ব্রহ্মজ্ঞানীদের ধ্বংস করতে সদা উদ্যত বেদ তাদের কঠোরতম শাস্তির নির্দেশ দিচ্ছে। যাতে একটি রাষ্ট্র সদা জ্ঞানবান বিদ্বান দ্বারা পূর্ণ থাকে এবং জ্ঞানের বিনাশক কেহ না থাকে।
 "হে শত্রুকে পরাজিত কারী অহন্তব্য বেদবাণী! তুমি এই ব্রাহ্মণের [ব্রহ্মজ্ঞানীর] হিংসক কে অর্থাৎ জ্ঞান বিনাশক কে কেটে ফেলো, উত্তমরূপে কেটে ফেলো, সম্যক কেটে ফেলো, এদের জ্বালিয়ে দাও, প্রকর্ষেন দগ্ধ করে দাও এবং সম্যক দগ্ধ করে দাও"
(অথর্ববেদ ১২।৫। ৬২-৬৩, হরিশরন সিদ্ধান্তলংকার)


পালটা যৌক্তিকতা বিচারঃ

দাদার মতে এখানে ব্রহ্মজ্ঞানী বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের হানিকারক কে জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যাক্তি কোণ ব্রাক্ষনের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাকে জালিয়ে পুড়িয়ে মারার কথা বলা হয়েছে (এখানে স্পষ্টই বোঝা যায় যে বেদ ঈশ্বর লিখেছেন নাকি স্বার্থবাদি ব্রাক্ষনসমাজ নিজেদের হাতে লিখেছে)।
যাক গে, যৌক্তিকতা বিচার করি এবার, ব্রাক্ষন সমাজ কেন রাষ্ট্রের জন্য এতটা গুরুত্বপুর্ন যে কেউ তার ক্ষতির চেষ্টা করলেই বেদ তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারার আদেশ দেয় ?
দাদার লিখলেন "একটি সমাজ তথা রাষ্টে প্রয়োজনিতা কতটুকু এ সমন্ধে অথর্ববেদ ৫।১৯।৬ এ বলা হয়েছে যে, " যে উগ্র রাজা অভিমানী হয়ে বেদবিদ বিদ্বান ব্রাহ্মণ কে নষ্ট করতে চায় তার রাষ্ট্র সম্পদ শূণ্য হয়ে যায়। যেখানে ব্রহ্মজ্ঞানী ব্রাহ্মণ কষ্ট প্রাপ্ত হয় সেই রাষ্ট্র পরাজিত হয়।"
দাদার মতে যে রাষ্ট ব্রাক্ষনদের নষ্ট করতে চায় সে রাষ্ট্র সম্পদ শূন্য হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন, আমেরিকার রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় তো ব্রাক্ষন নেই, তো তারা এত ধনী কিভাবে? সৌদিতেও তো ব্রাক্ষণ নেই, তারা ধনী কিভাবে ? বিশ্বের সেরা দশ ধনী রাষ্ট্রের একটিরও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ব্রাক্ষন তো দূরে থাক হিন্দুই নেই, তো তারা ধণী কেন ? দাদা ও তার বেদের মতে তাদের সম্পদ শুন্য হয়ে যাচ্ছে না কেন ?
আর হ্যা জ্ঞানবান বিদ্বান আর ব্রাক্ষন দুটো কিন্তু এক নয়। একজন জ্ঞানবান বিদ্বান হলেই কিন্তু তাকে ব্রাক্ষন বলা হয় না। যেমন স্টিফেন হকিং কে কি হিন্দুরা ব্রাক্ষন বলবে ? কিংবা রিচার্ড ডকিংসনকে ? কিংবা ইবনে সীনা, ইবনে বতুতাকে বা শেখ সাদীকে কি তারা ব্রাক্ষন সম্মোধন করবে ? করবে না, তাই জ্ঞানী ও ব্রাক্ষন এক নয়, বরং শুধু বেদ জ্ঞানীকেই ব্রাক্ষন বলা হয়, একিসাথে ব্রাক্ষণ জন্মসুত্রেই হয়ে থাকে একমাত্র, হোক সে জ্ঞানী, মুর্খ বা চোর,ব্রাক্ষন এমনকি নাস্তিকও হতে পারে। যেমন,
মনুসংহিতা ৩/১৫০ এ বলা আছে,
"যাহারা চৌর্যবৃত্তি করে, যে মহাপাতকী, যে নপুংসক, যার পরলোকে বিশ্বাস নেই, এমন সকল ব্রাক্ষন দৈব ও পৈত কার্যে অগ্রাহ্য।"



অর্থাৎ ব্রাক্ষন একিসাথে চোর, মহাপাপী এমনকি নাস্তিকও হতে পারে। সুতরাং এটা পরিস্কার গুনাবলি দ্বারা ব্রাক্ষন নয় বরং জাত বা জন্মসুত্র দ্বারাই ব্রাক্ষন। এটা নিয়েও দাদারা মিথ্যাচার করে, এটা নিয়ে পরবর্তীতে তাদের মিথ্যাচার ধরিয়ে দেয়া হবে।
যাক গে, এখন হিঁদুদের মধ্যে ব্রাক্ষনের ক্ষতিকারীর প্রতি এত কেন ভয়াবহ শাস্তি ? এটা কি যৌক্তিক হতে পারে ? শুদ্ররা তবে কি দোষ করল ? তাদের শ্রমেই তো সভ্যতা সৃষ্টি হয়। শ্রমিকের শ্রমেই সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু শুদ্রের ক্ষতিকারীর প্রতি তো বেদ কিছুই বলেনি? বৈশ্য ব্যাববসা বানিজ্যের দ্বারা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামো মজবুত করে, কই তার ক্ষতিকারীর প্রতিও কোণ আদেশ দেয়া হয়নি। অপরদিকে ব্রাক্ষন, যিনি শুধু বেদ পড়ে, তার ক্ষতিকারীর প্রতি এমন কঠোর আদেশ, এটা কি গ্রহনযোগ্য ?
আর হ্যা আমি যে মন্ত্রটি দিয়েছি সেখানে কোণ ব্রাক্ষনের ক্ষতিকারকের কথা নেই, স্পষ্ট বলা রয়েছে বেদ নিন্দুক এর কথা।আর্য সমাজের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে দেয়া অনুবাদটিই আমি প্রদান করেছি, পন্ডিত কেম কারন দাস ত্রিবেদির। aryasamajjamnagar.org/atharvaveda_v2/pages/p576.gif
দাদা ট্রিক করে পরবর্তী মন্ত্র আনতে চাইলেন কিন্তু পরবর্তী মন্ত্র দ্বারা আগের মন্ত্রের অর্থ চেইঞ্জ হয়নাই। ৬২ নাম্বার মন্ত্রে বেদ এর নিন্দাকারীকে ভয়াবহভাবে মারতে আদেশ দিচ্ছে এবং ৬৩ নাম্বার মন্ত্রে ব্রাক্ষনের ক্ষতিকারকের প্রতিও একি আদেশ দিচ্ছে।

এরপর আমার নোটে এ পরবর্তী অথর্ববেদ ১২/৫/৫৪ মন্ত্রটি নিয়ে দাদা আর কিছুই বললেন না, সেটা বাদ দিয়ে গেলেন, কারন সেখানে আমি আর্য সমাজের বেদ ভাষ্য দিয়ে প্রমান করেছি স্পষ্ট লেখা বেদ অনুযায়ী ধার্মিক ব্যাক্তির কাজ নাস্তিকদের হত্যা করা
নীচে আবারো মন্ত্রটি লিংক ও স্ক্রিণশটসহ আবার দিলাম।
“জালাতে হুয়ে, ভষ্ম কর দেতে হুয়ে তু বেদ নিন্দুককে লিয়ে ঈশ্বরকা বজ্ররুপ হ্যায়”
অর্থাৎ বেদ নিন্দুক বা নাস্তিককে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেয়া হচ্ছে বেদ অনুযায়ী ধার্মিকের কাজ।
মন্ত্রটির কমেন্টারিতে লেখা আছে,
“বেদানুযায়ী সত্যবীর পুরুষ নাস্তিকোকা নাশ করে”
অর্থ, বেদ অনুযাই সত্যবীর পুরুষ নাস্তিকদের হত্যা করবে।
কথা একেবারে স্পষ্ট। এজন্যই দাদা মন্ত্রটি এড়িয়ে গেলেন।



আর্য সমাজের ওয়েবসাইট লিংক aryasamajjamnagar.org/atharvaveda_v2/pages/p574.gif


আমার দেয়া যজুর্বেদ ৭।৪৪ মন্ত্র নিয়ে তারা জবাব লেখে,

যজুর্বেদ ৭।৪৪ এ তেজময় সেনাপতির প্রতি উদেশ্য করে বলা হচ্ছে যে, এই সেনাপতি আমাদের শত্রুদের দূর্গ কে বিদীর্ণ করে ঐশ্বর্য দান করেন এবং শত্রুদের উপর বিজয় লাভ করে।
"এই অগ্নি, নেতাপুরুষ সেনাপতি আমাদের ঐশ্বর্য প্রদান করে এই সংগ্রাম সমন্ধী দূর্গ কে বিদীর্ণ করে চলে সংগ্রামের কার্য মধ্যে ধন বা ঐশ্বর্য কে বিজয় করে এবং খুব প্রসন্ন হয়ে উত্তম পরাক্রম করে শত্রুকে জিতে।


আমার জবাবঃ

আমি আসলে খুব স্পষ্ট অনুবাদ প্রদানের মাধ্যমেই দেখিয়েছি যে সেখানে ধর্মের বাইরে যারা তাদেরকে শত্রু আখ্যা দিয়ে ধংস করার কথা বলা হচ্ছে। আসুন আরেকটু ব্যাখা করি। এখানে মুলত বৈদিক ধর্মের অনুসারী নয় যারা তাদেরকেই হত্যা করার কথা বলেছে, কোন সাধারন শত্রুকে নয়। এখানে চার প্রকার যোদ্ধার কথা বলা হয়েছে, প্রথম, যারা চিকিতসক, কারন তারা রোগের বিরুদ্ধে লড়ে, দ্বিতীয় যোদ্ধা হচ্ছে যারা যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে হত্যা করে, তৃতীয় যোদ্ধা হচ্ছে যারা ধর্ম প্রচার করে। আর চতুর্থ যোদ্ধা হচ্ছে সে, যে ধর্মের বাইরের লোকদেরকে নাশ করে।

নীচে স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতির অনুবাদ,



আর্য সমাজের ওয়েব সাইট থেকে সরাসরি পড়ুন aryasamajjamnagar.org/yajurveda/yajurveda.htm

এখন লক্ষ্য করুন যে যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে হত্যা করে তাকে দ্বিতীয় যোদ্ধাকে বলা হয়েছে । তাহলে চতুর্থ যোদ্ধা যিনি সে যাদের হত্যা করে তারাও যদি স্বাভাবিক শত্রু হয়ে থাকে তবে দ্বিতীয় ও চতুর্থ যোদ্ধার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। কিন্তু এখানে পার্থক্য করা হয়েছে। মোট ৪ টি ভাগ করা হয়েছে যোদ্ধাদের। দ্বিতীয় ভাগের যোদ্ধা শত্রুদের হত্যা করে, চত্তুর্থ ভাগের যোদ্ধা ধর্মহীণদের হত্যা করে। অর্থাৎ বেদ এখানে স্পষ্টভাবে যারা বৈদিক ধর্মের বাইরে তাদেরকে অধর্মী ও তাদের হত্যাকারীকে চতুর্থ যোদ্ধা বলে আখ্যা দিয়েছে।

এরপর পুনরায় দাদা আমার দেয়া আরেকটি মন্ত্র এড়িয়ে গেলেন, যেখানে এই ধর্মের বাইরের শত্রুদের পুড়িয়ে মারতে বলা হয়েছে। দাদা এর কোন জবাব দেয় নি। নিচে স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতির অনুবাদের স্ক্রীণশটসহ উক্ত মন্ত্রটি দেয়া হল,  যযুর্বেদ ১৩/১২,
“হে তেজধারী সভার স্বামী, রাজ্যে ধার্মিকদের প্রতি সুখের বিস্তার কর এবং ধর্ম বিদ্বেষীদের নিরন্তর ভাবে পোড়াও।”



আর্য সমাজের ওয়েব সাইট থেকে সরাসরি পড়ুন aryasamajjamnagar.org/yajurveda/yajurveda.htm

আমার দেয়া এর পরবর্তী মন্ত্রটিরও কোন জবাব দেন নি দাদা।
পরবর্তী মন্ত্রটি হচ্ছে,
যজুর্বেদ ১৩/১৩, শত্রুদের হত্যা কর ও তাদের জায়গা জমী ও রান্নাঘর ধংস কর।
নীচে স্বামী দয়ানন্দের অনুবাদ,



আর্য সমাজের ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি পড়ূন aryasamajjamnagar.org/yajurveda/yajurveda.htm

মুলত এই দুটি মন্ত্রে দাদার জবাব দেয়ার কিছুই নেই, তাই তিনি এদুটি এড়িয়ে গেলেন। কারন শুধু ধর্ম না মানা কিংবা বিদ্বেষ রাখার কারনে পুড়িয়ে মারা ও এরপর তাদের জায়গা জমি ও রান্নাঘর ধংস করা কোন সভ্য মানুষের কর্ম হতে পারে না। এগুলো হচ্ছে sadistic বা ধর্ষকামী মানসিকতা থেকে নির্গত।

আমার দেয়া পরবর্তী মন্ত্রের জবাবে তারা লেখে,
“সেনাপ্রধান হিংস্র ও নির্দয়ভাবে শত্রুদের  পরিবারের সদস্যদের সাথেও যুদ্ধ করবে।”(যজুর্বেদ ১৭।৩৯)
যজুর্বেদ ১৭/৩৮, শত্রূদের পরিবারকে হত্যা কর, তাদের জমি ধংস কর।
এইসব যুদ্ধের মুল প্রেরনা কি ?মূল প্রেরনা হচ্ছে শত্রুদের লুট করে ধনসম্পদ বৃদ্ধি।
.যৌক্তিকতা বিচারঃ
একটি রাষ্ট্রকে সুন্দররূপে গড়ার জন্য রাষ্ট্রে ধার্মিক বিদ্বানদের যেমন প্রয়োজন। তদ্রুপ রাষ্ট্রে অধার্মিক তথা যারা ধার্মিকদের উপর কুপিত হয় অথবা শত্রু ভাবাপন্ন তাদের বিনাশ করা। যদি একটি রাজা অপরাধী তথা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না গ্রহন করে। তার ফলাফল কি হবে মনুস্মতিতে স্পষ্ট হয়েছে - " রাজা যদি আলস্যের পরতন্ত্র হয়ে অপরাধীদের দন্ডবিধান না করে তাহা হইলে লোকেরা শূলে মৎস পাক করবার ন্যায় দূর্বলদিগকে যাতনা দিতে পারে, মনু ৭।২০) । এ জন্য মনুস্মৃতিতে যুদ্ধ কে ক্ষত্রিয়দের ধর্ম বলা হয়েছে (সংগ্রামাৎ ক্ষাত্রং ধর্মমনুস্মরম, মনু ৭।৮৭)
যজুর্বেদ ১৭।৩৮ মন্ত্রটি মূলত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সেনাদের উদ্যেশ্য করে বলা হয়েছে। তারা যেন সর্বোতভাবে সেনাপতিকে অনুসরন করে। কারন একজন সেনাপতি যুদ্ধবিদ্যায় অত্যন্ত দক্ষ হয়ে থাকে এবং সবার সুরক্ষা কবজ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। এ জন্য মন্ত্রটিতে বলা হচ্ছে সেনাগন জন যেন তারই অনুকুলে থেকে যুদ্ধ করে।
"হে বল কীর্তি বর্ণ আদি সমান রূপে বিখ্যাত বীর পুরুষ আপনি শত্রুর গোত্রের নাশক পৃথিবীকে প্রাপ্ত কারী বাহুতে বীর্যমান সংগ্রামে বিজয়কারী এবং বল পরাক্রম দ্বারা বিনাশ কারী সেনাপতিকে অনুসরন করে বীরতার কার্য করো। হে মিত্র লোক আপনারা তারই অনুকুলে থেকে উত্তম প্রকারে যুদ্ধ আরম্ভ করো।
(যজুর্বেদ ১৭।৩৮, জয়দেব শর্মা)
যুদ্ধে একটি সেনাপতির উত্তর দায়িত্ব কি তা পরের মন্ত্রে স্পষ্ট হয়েছে। সমস্ত সেনার নেতা হওয়ার দরুন একটি সেনাপতির দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সর্বদা রক্ষা করা। তাই মন্ত্রটিতে বলা হচ্ছে তিনি যেন সর্বতোভাবে আমাদের সেনাকে রক্ষা করে।
" নিজ শত্রু পরাজয়কারী বল দ্বারা শত্রু কুলের উপর আক্রমন করে দয়া রহিত শুরবীর অনেক প্রকারে কোপ করার সামর্থ শত্রু দ্বারা না বিচলিত হওয়া ব্যক্তি শত্রু সেনাকে বিজয় করার সামর্থ যুদ্ধ মধ্যে শত্রু দ্বারা অজেয় সেনাপতি সংগ্রাম মধ্যে আমাদের সেনাকে উত্তম রীতি দ্বারা রক্ষা করো।" (যজুর্বেদ ১৭।৩৯, জয়দেব শর্মা)


পালটা যৌক্তিকতা বিচারঃ

আমি (যজুর্বেদ ১৭।৩৯) এর রেফারেন্স দিলাম যেখানে বলা আছে, শুধু শত্রুদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হওয়া যাবে না, তাদের পরিবারকেও ধংস করতে হবে।
দাদা তার কোন জবাব দেন নি বরং সেনার কি কাজ ইত্যাদি অপ্রাসংগিক আলোচনা শুরু করলেন।
দাদার কথানুসারেই ধরি মন্ত্রগুলো যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বলা আছে। কিন্তু তাহলেও শত্রুদের পরিবার কি দোষ করল ? যুদ্ধের ময়দানে শত্রু নাশ করে তাদের পরিবারকেও ধংস করতে এগোতে বলা হয়েছে। এটা কেমন কথা বা কেমন মানবিকতা ? এরপর দাদা টেনেটুনে বলতে চাইলেন যে অপরাধীকে দন্ডাদেশ রাজার কর্ম। মন্ত্রে রয়েছে শত্রু, দাদার ব্যাখায় হয়ে গেল অপরাধী, সেক্ষেত্রে তো বেদ রচনাকারীও বিপক্ষের নিকট শত্রু ও সেক্ষেত্রে সেও অপরাধী। অপরাধীকে শাস্তি দেয়া আর শত্রুদের পরিবারকে হত্যা করা দুটি বিষয় কি এক হল ? এরপর দাদা জয়দেব শর্মার অনুবাদ এনে তেনা পেচিয়ে বিষয়টাকে অন্যদিকে নিতে চাইলো, অথচ যেখানে আমি আর্য সমাজের প্রতিষ্টাতা স্বামী দয়ানন্দের অনুবাদ দিয়েই দেখিয়ে দিলাম। আমার প্রধান আর্গুমেন্টটা ছিল শত্রুদের পরিবার হত্যা, আর সেটা দাদার দেয়া জয়দেব শর্মার অনুবাদেও স্পষ্টভাবে আছে, যেটা দাদা চটকদারভাবে বাংলা শব্দের জালে আড়াল করতে চাইলেন। নীচে দাদার দেয়া জয়দেব শর্মার স্ক্রীনশটেই পরিস্কার, দেখুন,
“শত্রুওকে গোত্র কা তোড়নে বালে, শত্রুওকা বংশনাশক”


অর্থাৎ বেদ তার সেনাপতিকে বলছে সে হচ্ছে শত্রুর গোত্র ধংসকারী তার বংশ ধংসকারী।
স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতি লিখেছেন
সেই সেনাপতিকে উতসাহিত কর, যে শত্রুর পরিবারকে ধংস করে, তাদের জড় কাটে, তাদের জমি দখল করে।নীচে স্ক্রীনশট।



সরাসরি পড়ুন aryasamajjamnagar.org/yajurveda/yajurveda.htm

অর্থাৎ মন্ত্রটিতে কি রয়েছে তা স্পষ্ট। এখানে শত্রুর পরিবারকেও ধংস করে তাদের সম্পত্তি জমি দখল করার কথা বলা হয়েছে।
এরপরবর্তী মন্ত্র যজুর্বেদ ১৭/৩৮ শত্রূদের পরিবারকে হত্যা কর, তাদের জমি ধংস কর। এটার জবাবে দাদা লিখলেন,

যুদ্ধে একটি সেনাপতির উত্তর দায়িত্ব কি তা পরের মন্ত্রে স্পষ্ট হয়েছে। সমস্ত সেনার নেতা হওয়ার দরুন একটি সেনাপতির দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সর্বদা রক্ষা করা। তাই মন্ত্রটিতে বলা হচ্ছে তিনি যেন সর্বতোভাবে আমাদের সেনাকে রক্ষা করে।
" নিজ শত্রু পরাজয়কারী বল দ্বারা শত্রু কুলের উপর আক্রমন করে দয়া রহিত শুরবীর অনেক প্রকারে কোপ করার সামর্থ শত্রু দ্বারা না বিচলিত হওয়া ব্যক্তি শত্রু সেনাকে বিজয় করার সামর্থ যুদ্ধ মধ্যে শত্রু দ্বারা অজেয় সেনাপতি সংগ্রাম মধ্যে আমাদের সেনাকে উত্তম রীতি দ্বারা রক্ষা করো। "


আমার জবাবঃ

দাদা আবারো চটকদার বাংলা শব্দের পর শব্দ বসিয়ে মুল ব্যাপারটাকে আড়াল করতে চাইলো।এবং মন্ত্রে আমার অভিযোগকৃত অংশকে বাদ দিয়ে গেল। একিসাথে ভালো করে দাদার নিজের অনুবাদটি পড়ে দেখুন তো, কিছু বোঝা যাচ্ছে কিনা আদৌ। যাক গে দাদার মতে এখানে একটি সেনাপতির দাইত্ব কি তা বলা হয়েছে। তা দাদার দেয়া স্ক্রীনশট অনুসারেই দেখে আসি যে সেনাপতির দাইত্ব কি।

তার দেয়া জয়দেব শর্মার স্ক্রীনশটেই রয়েছে,
“আপনে শত্রু পরাজয়কারী বলসে শত্রুওকে কুল পর আক্রমন করতাহুয়া, দয়ারহিত শূরবীর অনেক প্রকারকে কোপ করনেমে সমর্থ”


অর্থাৎ সেনাপতির দাইত্ব শত্রুকে পরাজয় করার পর সেই শক্তি নিয়েই তাদের বংশ পরিবারে সে দয়ারহিত নির্দয়ভাবে আক্রমন করবে।
দাদা মন্ত্রটিতে এই অংশটা এড়িয়ে গেলেন আর সেনপতি নিজ সৈন্যকে রক্ষা করবে এই দাইত্বটা হাইলাইট করলেন। সেনাপতি নিজ সৈন্যদের রক্ষা করবে এটাই তো স্বাভাবিক, কিন্তু শত্রুদের হত্যার পর তাদের পরিবারকে নির্দয়ভাবে ধংস করা এটা কোন আদর্শ সেনাপতির কাজ ? বেদ কি শিক্ষা দিচ্ছে মানুষকে ? জনৈক দাদাও নিজের চোখে কালো পট্টি বেধে কিসেরই বা জবাব লিখতে বসেছেন? নাকি অনলাইন হিন্দুদের ধোকা দিতে কোনরকম কিছু একটা লিখে দিলেই হল ?

পরবর্তী মন্ত্রদ্বয় নিয়ে দাদা লেখে,

যজুর্বেদ ১৮/৭৪, "হে সেনাপ্রধান, আমাদের আশা পুর্ণ করো। হে ধনসম্পদের বাদশা, তোমার সহায়তায় আমরা যেন সম্পদশালী হতে পারি এবং যুদ্ধে জয় লাভ করে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হতে পারি।”
আর যজুর্বেদ ২৯/৩৯ এ, এভাবেই যুদ্ধে ধনসম্পদ লুট খুনের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ব দখল করতে বলেছে।
এই সব মন্ত্রে স্পষ্টভাবে কোন আত্তরক্ষার্থে নয় বরং যারা শান্তিপ্রিয় তাদেরকে আক্রমন করে দখল করতে বলছে।
যৌক্তিকতা বিচারঃ
বেদ কখনো শান্তিপ্রিয় মানুষদের শাস্তির আদেশ দেয় নি। বেদে পরিষ্কার বলা হয়েছে, "অনাগে হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে ; অথর্ববেদ ১০।১।২৯ " অর্থাৎ নির্দোষের হত্যা নিশ্চয়রূপে ভয়ানক। অর্থাত্ বেদ নির্দোষের উপর অত্যাচার কে অপরাধ বলে গণ্য করছে। মনুস্মৃতি ৭।১৯ এ বলা হয়েছে রাজা যদি নিরাপরাধ ব্যক্তিকে দন্ড প্রদান করে তবে তার রাজ্যের বিনাশ ঘটবে।
অতএব বেদের নির্দেশ মতে অস্ত্রের ব্যবহার শুধু অপরাধীদের জন্য। এবং বেদ সর্বদা শত্রুদের উপর বিজয় প্রাপ্তির নির্দেশ দিয়েছেন। কারন বেদ কখনো সজ্জন ব্যক্তিদের হীনবল বা পরাজয়তাকে স্বীকার করে না। বেদ সর্বদা মানুষদের সাবলীল হতে শিক্ষা দেয় যাতে কোন শত্রু সেনা তাদের ক্ষতি করতে না পারে -
হে বীর পুরুষ! যেমন আমরা যে শস্ত্র - অস্ত্র খারাপ কামনাকে নষ্ট করে, সেই ধনুক আদি অস্ত্র শস্ত্র বিশেষ দ্বারা পৃথিবীকে এবং উক্ত শস্ত্র বিশেষ দ্বারা সংগ্রাম কে জয় করি তোপ আদি অস্ত্র শস্ত্র দ্বারা তীব্র বেগবান আনন্দের সাথে বর্তমান শত্রু সেনাকে জয় করি ধনুক দ্বারা সব দিশা প্রদিশা কে জয় করি।
(যজুর্বেদ ২৯।৩৯, দয়ানন্দ সরস্বতী)
একটি সংগ্রামের পরিচালনার মূল দায়িত্ব সেনাপতির হয়ে থাকে। এবং একজন যোদ্ধা সবসময় সেনাপতির রক্ষায় থেকে সমরে যুদ্ধ করে সংগ্রামের বিজয় কে প্রাপ্ত করে।
হে যুদ্ধবিদ্যা জ্ঞাত সেনাপতি! আমরা তোমার রক্ষা আদিকে বিদ্যা দ্বারা সেই কামনা কে প্রাপ্ত হই প্রশস্ত ধনযুক্ত উত্তম বীর প্রাপ্ত হই, যাহার দ্বারা সেই ধন কে প্রাপ্ত হই সংগ্রাম করে আমরা সংগ্রামের বিজয় কে উত্তম প্রকারে প্রাপ্ত হই, হে বৃদ্ধপন রহিত সেনাপতি আমরা তোমার প্রতাপ দ্বারা অক্ষয় ধন এবং কীর্তিকে প্রাপ্ত হই।
(যজুর্বেদ ১৮।৭৪, দয়ানন্দ সরস্বতী)


পাল্টা যৌক্তিকতা বিচারঃ
দাদার মতে বেদ কখনো শান্তিপ্রিয় মানুষদের শাস্তির আদেশ দেয়নি। দাদা বেদ এর একটি মন্ত্রও আনলেন এটা প্রমানে, অথর্ববেদ ১০/১/২৯ যেখানে বলা, নির্দোষের হত্যা নিশ্চয়রুপে ভয়ানক। খুব ভালো কথা। কিন্তু মন্ত্রটি আমরা যদি যাচাই করতে যাই, আমরা এই কথাটি তখন একটু অন্য অর্থে পেয়ে যাবো। ধরুন কোণ গোত্রকে আক্রমন করার সময় গোত্র প্রধান জীবন বাচাতে বললেন, নির্দোষকে হত্যা ভয়ানক, তাই আমাদের গোত্রকে মেরো না। তখন তার এই কথাটিকে কি স্বার্বজনীন অর্থে নেয়া যায়? এখানে সে নির্দোষ দাবি করেছে নিজেদেরকে এবং যাতে তাদের কিছু না বলা হয় এর আর্জি পেশ করছে। ধরুন আদালতে এক আসামী নিজেকে নির্দোষ দাবি করল, এবং বলল সে নির্দোষ, তাই তাকে দন্ড দেয়া অন্যায় কাজ। এখন এখানে কি সে মানবজাতির জন্য স্বার্বজনীন কোন বানী পেশ করল নাকি নিজেদের জীবন বাচাতে বুলি আওড়ালো মাত্র? নির্দোষকে যে হত্যা করা খারাপ কাজ এটা মানুষ মাত্রই জানে, বুঝে। কিন্তু বেদ মতে নির্দোষ কারা ? শুধুমাত্র মিত্রপক্ষরা। অর্থাৎ বেদ রচনাকারীদের মিত্রপক্ষরা। এই মন্ত্রটি শত্রুপক্ষের আক্রমনের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, নির্দোষকে হত্যা ভয়ানক কাজ, এজন্য আমাদের গরু, ঘোড়া ও মানুষদের মেরো না।



আশা করি বুঝতে পেরেছেন দাদা যেভাবে মন্ত্রটির অংশগত তুলে ধরে এটাকে বেদ এর মহান স্বার্বজনীন বানী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছিলেন এখানে সেই অর্থে সেটা বলা হয়নি। কোরানে রয়েছে যে কোন নিরীহকে হত্যা করে সে পুরো মানবতাকেই হত্যা করে। কোরান যদি এরপরেই লিখত যে এজন্য কোন মুসলিম বা আমাদের লোকদের মেরো না, তাহলেই কোরানের মানবতার পরিধিটা বোঝা যেত। বেদ এর মানবিকতার পরিধি যেমন শুধু মিত্রপক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল।

এরপর দাদা মনুস্মৃতি ৭।১৯ এর রেফারেন্স আনলেন প্রমানে যে নিরিহ মানুষ হত্যা হিন্দু ধর্মমতে সঠিক নয়। কিন্তু মনুস্মৃতি ৭।১৯ এ মুলত রাজ্যের প্রজাদের দন্ডের ব্যাপারে বলা হয়েছে, শত্রুপক্ষের ব্যাপারে নয়। এখানে বলা রয়েছে রাজা যদি সঠিক বিবেচনা না করে প্রজাদের দন্ড প্রদান করে তবে রাজ্য ধংস হয়। আর এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক, রাজা অবিবেচক দন্ডদাতা হলে প্রজারাই তার বিদ্রোহ করবে। এখানে শত্রুপক্ষের ব্যাপারে কোন কিছুই বলা হয়নি।



এরপর যজুর্বেদ ২৯।৩৯ এর ব্যাপারে বলছি, আমি দেবী চাদের যে ইংরেজী অনুবাদটি পড়েছিলাম, সেখানে শত্রুদের ease loving বা শান্তিপ্রিয় বা আরামপ্রিয় বলা হয়েছে। কিন্তু দয়ানন্দের হিন্দি ভাষ্যে এমনটা নেই। তাই আর এই মন্ত্রটি নিয়ে তাদের জবাব সম্পর্কে আর কমেন্ট করলাম না।

পরবর্তী মন্ত্র যজুর্বেদ ১৮/৭৪ নিয়ে দাদার লেখা

“হে সেনাপ্রধান, আমাদের আশা পুর্ণ করো। হে ধনসম্পদের বাদশা, তোমার সহায়তায় আমরা যেন সম্পদশালী হতে পারি এবং যুদ্ধে জয় লাভ করে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হতে পারি।”
যৌক্তিকতা বিচারঃ
একটি সংগ্রামের পরিচালনার মূল দায়িত্ব সেনাপতির হয়ে থাকে। এবং একজন যোদ্ধা সবসময় সেনাপতির রক্ষায় থেকে সমরে যুদ্ধ করে সংগ্রামের বিজয় কে প্রাপ্ত করে।
হে যুদ্ধবিদ্যা জ্ঞাত সেনাপতি! আমরা তোমার রক্ষা আদিকে বিদ্যা দ্বারা সেই কামনা কে প্রাপ্ত হই প্রশস্ত ধনযুক্ত উত্তম বীর প্রাপ্ত হই, যাহার দ্বারা সেই ধন কে প্রাপ্ত হই সংগ্রাম করে আমরা সংগ্রামের বিজয় কে উত্তম প্রকারে প্রাপ্ত হই, হে বৃদ্ধপন রহিত সেনাপতি আমরা তোমার প্রতাপ দ্বারা অক্ষয় ধন এবং কীর্তিকে প্রাপ্ত হই।
(যজুর্বেদ ১৮।৭৪, দয়ানন্দ সরস্বতী)

পাল্টা যৌক্তিকতা বিচারঃ

আমার প্রশ্নের কোন জবাবই এখানে পেলাম না, আমার অভিযোগ ছিল বেদ এ প্রার্থনা করা হয়েছে যেন যুদ্ধের মাধ্যমে ধনসম্পদ অর্জন করা যায়। দাদা এটা নিয়ে কোন জবাবই দিলেন না। দাদার দেয়া দয়ানন্দের স্ক্রীনশটেও এটা স্পষ্টই দেয়া আছে, যুদ্ধের মাধ্যমে যেন প্রচুর ধনসম্পদ ও বিজয় লাভ করা যায়।




এরপর দাদা আবারো আমার দেয়া একটি মন্ত্র বাদ দিয়ে গেলেন, যজুর্বেদ ৭/৩৮, যেখানে লেখা “যুদ্ধই তোমাদের উন্নতির উৎস, এজন্যই তোমাদেরকে আমি যুদ্ধে প্রেরন করি”
দাংগবাজ আর্যজাতির উন্নতির উতস ছিল যে লুটপাট ও দাংগা সেটা বেদেও অকপটে লেখা হল, দাদা এই মন্ত্রটার জবাব না দিয়ে এড়িয়ে গেলেন, নীচে স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতির অনুবাদ,



এরপর বেদাঙ্গ গ্রন্থ নিরুক্ত ৪/৫ এর রেফারেন্স দিলাম ধনসম্পদ লুটের, দাদা সেটারো কোন জবাব দিলেন না, এখানে লেখা আছে,“শত্রুদের ধংস করে তাদের সম্পদ কেড়ে আনো। তাদের সম্পদ ও খাদ্য ঘর থেকে ছিনিয়ে আনো।”




এরপর মনুসংহিতা নিয়ে দাদার লেখা জবাব,

বেদের নিয়মের কারনে মনুসংহিতাতেও সব কিছু দখল করতে বলা হয়েছে -
“গাড়ি, ঘোড়া, হাতি, অর্থ, শস্য , গবাদিপশু ও নারী তার দখলে যে যুদ্ধের মাধ্যমে তা জয় করে।”(মনু ৭।৯৬)
অর্থাৎ শত্রু পরিবারের নারীরাও যাবে দখলকারীর ভোগের জন্য।
যৌক্তিকতা বিচারঃ
মনুসংহিতার ৭ম অধ্যায়টি হলো রাজধর্ম বিষয়ক, রাজার আচরন ও বৈশিষ্ট্য কেমন হওয়া উচিত এখানে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে ৷ অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কতকগুলো হলো মদ্যপান, পাশাখেলা বা জুয়াখেলা, স্ত্রীসম্ভোগ, মৃগয়া বা অকারন পশুহত্যা, পরধনঅপহরন, অকারনে দন্ডদান ও কঠোর বাক্য প্রয়োগ এইগুলির থেকে দূরে থাকতে রাজাকে উপদেশ করা হয়েছে (মনু ৭/৫২) ৷
এবং মনু ৭।৫০ এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে মদ্যপান, পাশক্রীড়া, স্ত্রীসম্ভোগ, পশুমারন এ চারটি অতিশয় দুঃখহেতু। অর্থাৎ মনু মহারাজ কোন পরস্ত্রীকে ভোগ অথবা পরের সম্পদকে দখল করাকে সমর্থন করে নি বরং দুঃখদায়ক বলেছেন। একজন ক্ষত্রিয় রাজা হিসেবে বিভিন্ন সময় যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেই হয় সেই যুদ্ধে অনেকসময় ধনাদি লাভ হয়, শত্রুপক্ষের নিরীহ স্ত্রীও হস্তগত হয় ৷ এখানে সেটাই বলা হয়েছে ৷ সেই অসহায় স্ত্রীর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও তাকেই নিতে হবে ৷ ধনসম্পদ রাজাকে হস্তান্তরিত করতে হবে যাতে সেগুলো রাজকার্যে ব্যায়িত হতে পারে (মনু ৭/৯৭) ৷ এবং রাজা নিরীহ নরনারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন ৷ কারন যুদ্ধসজ্জাবিহীন বা অস্ত্রধারী লোকেদের হত্যা করা যাবে না (মনু ৭/৯২)। অর্থাৎ পরাজীতনারী ও পুরুষের নিরাপত্তা ও তাদের স্বাভাবিক জীবনের দায়িত্ব রাজাকেই নিতে হবে ৷ যেমনটা রামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের পর পরাজিত লঙ্কা রাজ্যের সকল নরনারীদের নিরাপত্তা প্রদান করেছিলেন।


পালটা যৌক্তিকতা বিচারঃ

দাদা লিখলেন মনু ৭।৫০ এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে মদ্যপান, পাশক্রীড়া, স্ত্রীসম্ভোগ, পশুমারন এ চারটি অতিশয় দুঃখহেতু। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এখানে স্ত্রী সম্ভোগকেই দুখঃহেতু বলা হয়েছে। পরস্ত্রীসম্ভোগ নয়।অর্থাৎ যে কোণ প্রকারে নারী সম্ভোগই নারী বিদ্বেষী মনুর নিকট দুঃখের ব্যাপার। আবার সেই এক মনুসংহিতায়ই আবার বলা রয়েছে, “মাংস ভক্ষণ, মদ্যপান ও মৈথুনাদিতে কোন দোষ নাই। ইহা জীবেরই প্রবৃত্তি।” (৫/৫৬) .


এখন দাদা কি বলবে ?
দাদা এরপরে লিখলেন একজন ক্ষত্রিয় রাজা হিসেবে বিভিন্ন সময় যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেই হয় সেই যুদ্ধে অনেকসময় ধনাদি লাভ হয়, শত্রুপক্ষের নিরীহ স্ত্রীও হস্তগত হয় ৷ এখানে সেটাই বলা হয়েছে ৷ সেই অসহায় স্ত্রীর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও তাকেই নিতে হবে । দাদা কোথায় পেলেন সেই অসহায় স্ত্রীদের রক্ষনাবেক্ষনের দাইত্ব তাকে নিতে হবে এই কথা ? এরপর লিখলেন, এবং রাজা নিরীহ নরনারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন ৷ কারন যুদ্ধসজ্জাবিহীন বা অস্ত্রধারী লোকেদের হত্যা করা যাবে না (মনু ৭/৯২)।
মনু ৭/৯২ এ যুদ্ধ ময়দানে যুদ্ধবিহীন দর্শনার্থি, নিরস্ত্র লোকদের হত্যা করা যাবে না, বুঝলাম, কিন্তু এ দ্বারা তো এটা বুঝায় না যে শত্রুদের স্ত্রীদের ধর্ষন করা যাবে না ?
দাদার মত অনুসারে যদি মনুর উক্ত বানী দ্বারা শত্রুপক্ষের নিরিহ লোকদের রাজা দ্বারা নিরাপত্তা বোঝায় তবে সেখানে নারীর সাথে নর এর কথাও উল্লেখ থাকত, বা স্বাভাবিকভাবে বলা হত শত্রুপক্ষের মানুষ বা নরনারী। কিন্তু তা না করে লিখা হল, শত্রুপক্ষের হাতি, ঘোড়া শস্য ও নারী তার দখলে থাকবে যে জোর করে ছিনিয়ে আনবে। এদ্বারা স্পষ্টই বোঝা যায় নারীকে কি কাজে রাখা হবে।
একিসাথে দাদাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ, পরাজিতদের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবনের দাইত্ব রাজা নিবে এরকম কোন কথা বেদ, পুরান, সংহিতা বা যেকোন জায়গা থেকে কমপক্ষে মাত্র একটা রেফারেন্স দিয়ে পারলে প্রমান করুক। বেদ অনুসারে আমরা দেখেছি শত্রুদের হত্যা ব্যাতীত আর কোন পথ রাখে নি। তাদের পরিবারকে হত্যা করতে বলা হয়েছে, আর মনু মতে তাদের নারীদের নিজ দখলে আনতে বলেছে।

পরবর্তী মন্ত্র ও দাদার ব্যাখা

যজুর্বেদ ১৬/৩৬, “তার প্রতি শ্রদ্ধা, যার রয়েছে তলোয়ার, তীর। তার প্রতি সন্মান যার রয়েছে ধারালো অস্র। তার প্রতি খাদ্য নিবেদন যার রয়েছে ভাল অস্র।”
অর্থাৎ বেদ সমগ্র বিশ্ব দখল করবে জ্ঞান বা ভালবাসা দিয়ে নয়, বরং অস্র দিয়ে, শান্তিপ্রিয় মানুষদের হত্যা করে ও তাদের এলাকা দখল করে।
যৌক্তিকতা বিচারঃ
মন্ত্রটিতে মূলত একজন সেনাপতি তথা যোদ্ধার প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে। একটি রাজ্যে একজন যোদ্ধা যিনি নিজ রাজ্যকে সুরক্ষার জন্য সর্বদাই প্রচেষ্টা করে থাকে। এরূপ অস্ত্রধারী যোদ্ধাকে সবার কর্তব্য সম্মান জানানো এবং তার সৎকার করা। যেমন একটি দেশে অস্ত্রধারী সেনাবাহীনিদের সবাই সম্মান করে। কারন তারা রাষ্টের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করে। যদি কেউ এরূপ যোদ্ধাকে সম্মান করে তার মানে কি তারা শুধু হত্যা করতে পছন্দ করে? বেদ শুধু মাত্র দন্ডের কথাই বলেনি সাথে সবাইকে বলেছে - আমরা যেন সবাইকে মিত্রের চোখে দেখি এবং সবাই আমাকে মিত্রের চোখে দেখে (যজুর্বেদ ৩৬।১৮)। কিন্তু যারা সর্বদা মিত্রের চোখে না দেখে শত্রুর চোখে দেখে এবং ব্রহ্মজ্ঞানীদের নাশ করতে সদা উদ্যত হয়। বেদ শুধু মাত্র তাদের উচিৎ দন্ডের আদেশ দিয়েছে কোন শান্তিপ্রিয় মানুষদের নাশ করতে বলে নি। কারন নির্দোষের হত্যা যে ভয়ানক তা বেদ নিজেই বলেছে (অঃ ১০।১।২৯) । অতএব একজন রাজা হিসেবে কর্তব্য এইযে নিজ রাজ্যকে শত্রুমুক্ত এবং বিদ্বাপূর্ণ করা এবং একজন প্রজা হিসেবে কর্তব্য উত্তম শস্ত্রধারী যোদ্ধাকে সর্বদা সৎকার এবং সম্মান করা।
যে রাজা এবং প্রজার অধিকারী লোক দৃঢ এবং উত্তম বিচারশীল তথা কোমল স্বভাবযুক্ত পুরুষকে অন্ন দেবে বহু শস্ত্রবান এবং প্রসংশিত শস্ত্র এবং কোশবান কে ও সৎকার করবে এবং তীক্ষ অস্ত্রশস্ত্র যুক্ত এবং উত্তম প্রকার তোপ আদি দ্বারা লড়া বীর দ্বারা অধক্ষ্যপুরুষকে ও সৎকার করবে সুন্দর আয়ুধো বান এবং উত্তম ধনুক যুক্ত তথা অনেক রক্ষোক কে অন্ন দেবে।
(যজুর্বেদ ১৬।৩৬, দয়ানন্দ সরস্বতী)

পাল্টা যৌক্তিকতা বিচারঃ
দাদার মতে মন্ত্রটিতে একজন সেনাপতিকে সন্মান জানানো হয়েছে, এজন্যই অস্র শস্রের দিকে শৃদ্ধা জানানো হয়েছে। যাকগে এটুকু মেনে নিলাম। একিসাথে দাদা দেখালেম যজুর্বেদ ৩৬/১৮ এর রেফারেন্স দিয়ে যে এখানে প্রার্থনা করা হয়েছে সবাইকে যেন সে মিত্রের চোখে দেখে এবং সবাই যেন তাকে মিত্রের চোখে দেখে। প্রকৃতপক্ষে বেদ নামক গ্রন্থটি যে একজন ব্যাক্তি নয় বরং একাধিক জনের লেখা প্রার্থনা বচনসমষ্টি এটা আগেই প্রমান করেছি। তাই শুধু যে বিদ্বেষপরায়ন ব্যাক্তিদের প্রার্থনাই বেদ এ এসেছে এমন নয়, সহিষ্ণু ব্যাক্তিদের প্রার্থনাও এসেছে। এজন্যই বেদ এর একটি মন্ত্র প্রায়শই আরেকটি মন্ত্রের বিপরীতে চলে যায়। যেমন বেদ যদি সবাইকে বন্ধুর চোখে দেখার কথা বলে, তবে কিকাট গোষ্টির কি দোষ ছিল ? তাদের কেন বন্ধুর চোখে দেখা হল না ? ধর্ম পালন না করাই ছিল তাদের অপরাধ। তাহলে বন্ধুর চোখে দেখা হবে তাদের যারা বৈদিক ধর্মাবলম্বি। বৈদিক ধর্মের বাহিরে যারা রয়েছে, যারা অগ্নিতে ঘি ঢেলে পুজা করেনা তাদের কি করতে হবে বেদ প্রাকটিকালি দেখিয়ে দিয়েছে কিকট গোষ্টীর মাধ্যমে।

পরিশেষে বলি, বেদ হতে এরকম আরো গন্ডাখানেক এরও বেশি হানাহানি মারামারি ও অমানবিক মন্ত্র বের করা যাবে। বেদ এর বিরাট একটি অংশেই জাত প্রথা ও ধর্মের বাইরের লোকদের প্রতি ভেদাভেদ তুলে ধরা আছে। আশা করি ভবিষ্যতে এটা নিয়ে এর দ্বিতীয় পর্ব লেখা হবে।