রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭

ব্রাক্ষা স্বরস্বতির ইনচেষ্ট নিয়ে হিন্দুদের গোড়ামীর জবাব

হিন্দু ধর্মে ইনচেষ্টের রগরগে কাহিনির কথা সবাই ই জানেন।তবে কিছু  হিন্দুরা, এইসব ইনচেষ্টের একটা আধ্যাত্তিক ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করে, বলে এগুলার রুপক ব্যাখা আছে, আধ্যাতিক ব্যাখা আছে, ইত্যাদি। 
আগে আসুন দেখি এক নজরে বাপ মেয়ে তথা ব্রক্ষা স্বরস্বতির ইনচেষ্টের কাহিনিগুলো ,
ভগবত পুরাণ ৩।১২।২৮ তে উল্লেখ আছে-
“বাচং দুহিতরং তন্বীং স্বয়ম্ভুর্হরতীং মনঃ।
অকামাং চকমে ক্ষত্তঃ সকাম ইতি নঃ শ্রুতম।।২৮
ব্যাসদেব বলছেন “হে বিদুর! ব্রহ্মার কন্যা সরস্বতী(যেহেতু সরস্বতী ব্রহ্মার মুখ হইতে উৎপত্তি লাভ করেছিলেন সেই অর্থে ব্রহ্মার কন্যা,
ভগবত পুরাণ ৩।১২।২৬)অতীব মনোহারিণী সুন্দরী ছিলেন, আমি শুনেছি যে একদা নিজকন্যাকে দেখে ব্রহ্মা কামগ্রস্থ হয়েছিলেন যদিও সরস্বতী নিজে কামভাবরহিতা ছিলেন”
ভগবত পুরাণ ৩।১২।২৯
“পিতাকে এই রকম অধর্মজনক কুকর্মে আসক্ত দেখে তাঁর পুত্র মরীচিপ্রমুখ মুনিগণ সবিনয় বচনে বুঝিয়েছিলেন”
গবত পুরাণ ৩।১২।৩০
“হে পিতা! আপনি অসীম প্রভাবশালী হয়েও আপনার মনে উৎপন্ন কামবেগ সংবরণ না করে নিজ কন্যার প্রতি কামাভিলাষ পূরণের মতো যে দুস্তর পাপকর্মে উন্মুখ হচ্ছেন, আপনার পূর্ববর্তী কোনো ব্রহ্মাই (শ্রেষ্ট ব্যক্তি) তো এমন কর্ম অতীতে করেননি আর ভবিষ্যতেও করবেন না।
ভগবত পুরাণ ৩।১২।৩৩
“নিজপুত্র মরীচি প্রভৃতি প্রজাপতিদের এইরকম বাক্য প্রয়োগ করতে দেখে প্রজাপতি পিতা ব্রহ্মা অত্যন্ত লজ্জিত হলেন এবং ব্রীড়াবশত তাদের সামনেই নিজ দেহ পরিত্যাগ করলেন। তখন ব্রহ্মার পরিত্যক্ত সেই নিন্দনীয় শরীরটি দিকসকল গ্রহণ করল। সেটিই কুয়াশা-রূপে পরিণত হল, যাকে অন্ধকারও বলা হয়”
অতঃপর অত্যান্ত অশ্লীল ও ইনচেষ্ট এর এই রগরগে বর্ননা দেয়া ঘটনাগুলোকে হিন্দুরা আধ্যাত্তিক বর্ননা দেয়ার চেষ্টা করে ।
হিন্দুরা লিখে,

এই বিষয় টা দেখে খুব খারাপ ও কুরুচিকর মনে হচ্ছে, এটা তাদের চোখেই খারাপ ও কুরুচিকর মনে হবে যাদের দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান নেই। কারণ আধ্যাত্মিক জ্ঞানের দৃষ্টিতে এর ব্যাখা টাই সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। আর পুরাণে অধিকাংশ বিষয় আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়। মৎস্য পুরাণ ও ভগবত পুরাণ উভয় স্থানে মনু ও ঋষিসমূহ এর ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।
মৎস্য পুরাণের ক্ষেত্রে ভগবান মৎস্য তার উত্তরে বলেছেন – “এই সৃষ্টি রজগুণ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে” যার জন্য স্বয়ং ব্রহ্মা মানে এখানে পৌরানিক ব্রহ্মা রজগুণের প্রতিক, এখানে ব্রহ্মা কোনো ভগবান বা ঈশ্বর নয় 
ব্রহ্মা হল সর্বগুনেশ্বর”, তাই এখনে এই ঘটনায় ব্রহ্মা হল গুণবাচক রজগুণ, আর এই রজগুণের জন্য মানুষের মনে মোহ,কাম ও লোভের উৎপন্ন হয়।
যা এখানে হয়েছে “শতরূপার রূপ দেখে ব্রহ্মা কামার্ত হয়ে পড়লেন”। এখানে শতরূপা হল “সাকার শতসৌন্দর্যের” প্রতিক। আর এটা স্বাভাবিক যে কোনো শতসৌন্দর্যময় জিনিসে প্রতি মানুষের রজগুনের দরুন সেই তার দিকে আকৃষ্ট হবেই। এখানে মানুষের এই রজগুন কে এই ঘটনাতে ব্রহ্মা বলে তুলনা করা হয়েছে এবং শতরূপা হল “সাকার শতসৌন্দর্যময়
পুরুষ মানুষের স্বিয় স্বভাব(ব্যাতিক্রম-যোগীপুরুষ ছাড়া)কোনো সেক্সি,হট,রূপসী মেয়েকে দেখলে পুরুষ মানুষের নিজ রজগুনের দরুন সেই মেয়ে কে দেখে কামগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং তার রূপ কে বিভর ভাবে দেখতে থাকে, আর ভাবে - ইস! যদি এটা আমার গার্লফ্রেন্ড বা বৌ হতো!
মৎস্য পুরাণের ঘটনাটা ঠিক তাই, ব্রহ্মা হল এখানে মানুষের মনের সেই রজগুন ।


আমার জবাবঃ

এভাবে তো চটির মধ্যেও আধ্যাত্তিক বা শিক্ষনীয় জ্ঞান খোজা যেতে পারে। ধরে নিই, কলি নামক চৌদ্ধ বছরের বালিকা ৫০ বছরের এক ব্যাক্তির সাথে সেক্স করল। অতঃপর স্থানে স্থানে সেই কামলীলা ও কামকেলীর বর্ননা। অতঃপরের কাহিনি মেয়ে গর্ভবতী, মেয়ের বাবা মা মেয়েকে দোষারপ করল ও মেয়ে আত্তহত্যা করল।
এখন এই কাহিনিতেও তো শিক্ষনীয় আছে যে এভাবে অবাধ সেক্স করা উচিত নয়। কিন্তু এই শিক্ষা দিয়ে কি এখানে কামকেলির বর্ননা পবিত্র হয়ে যাবে ? বা এই চটি সাহিত্য আধ্যাত্তিক হয়ে যাবে ?
মোটেই না।
অবাধা যৌনতা খারাপ এটা বুঝাতে কি বাপ মেয়ের ইনচেষ্টের কাহিনি আনতে হয় ? এটা সত্যিই অবাক করা বিষয়। প্রাচীন মুনিরিষিদের গাজার প্রকোপে বিভিন্ন দার্শনিক খেয়াল আসত, যেহেতু তাদের মনে থাকত অবমিত কাম তো স্বাভাবিক সেই দার্শনিক ব্যাখাকেও তারা কামলীলা ছাড়া ব্যাখ্যা করতে পারত না।
আর হিন্দুদের মতে এখানে ব্রক্ষা মানে নাকি ব্রক্ষা না বরং সাধারন ব্যাক্তি। বা স্বাভাবিক মানুষের চরিত্র। উল্লেখ্য পুরাণ অনুসারেও কিন্তু ব্রক্ষা ঈশ্বর নয় বরং একজন দেব সত্তা যিনি মহাজগতের সকল জীবের প্রধান। ঋগবেদ পুরুষসুক্ত অনুসারে তার দেহ থেকেই সকল জীব ও মহাজগতের সৃষ্টি। পুরাণ অনুসারে মহাবিশ্ব সৃষ্টি তার অন্ডকোষ হতে তাই এর আরেক নাম ব্রক্ষান্ড। বিভিন্ন জায়গায় ব্রক্ষার অবস্থানও বিভিন্ন বলা হয়েছে। আসুন দেখি স্বামী প্রভুপাদ এই মন্ত্রে ব্রক্ষার ব্যাপারে কি বলেছেন,
The post of Brahmā is the supermost post in the universe, and it appears that there are many Brahmās and many universes besides the one in which we are situated
http://www.vedabase.com/en/sb/3/12/30
তাহলে এত সন্মানীয় একজন সত্তাকে নিয়ে ইনচেষ্ট রচনা করে কেন মানুষকে বুঝাতে হবে যে অবাধ যৌনতা উচিত নয় ? এতে কি মানুষকে বুজানো হবে না বরং উতসাহ দেয়া হবে ?
বরং তখন তো উলটো হবে, যে, যেহেতু এত সন্মানিত একজন করেছে তাহলে আমরা করতে বাধা কোথায় ?
তাই ইনচেষ্ট এর মাধ্যমে নৈতিকতা শিক্ষা এটা সম্ভবত একমাত্র হিন্দু ধর্মেই পাওয়া যায়।